মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:০৯ অপরাহ্ন
ছবি-সংগৃহীত
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : নশ্বর এ পৃথিবীতে আল্লাহর অবিনশ্বর কালাম আল কোরআন। রমজান কিংবা রমজানের বাইরে পৃথিবীর সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ কোরআনুল কারিম।
যদি প্রশ্ন করা হয়–মানুষ তার মেধা ও মননের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি করেছে কোন গ্রন্থকে কেন্দ্র করে? কোন গ্রন্থ যুগ যুগ ধরে অসংখ্য মানুষকে বহু বিচিত্র জ্ঞান-বিদ্যার চর্চায় উদ্দীপিত করে রেখেছে?
পৃথিবীর সত্যনিষ্ঠ সব মানুষ অকুণ্ঠ উচ্চারণে বলে উঠবে- কোরআনুল কারিম।
সত্যিই- কোরআন মাজিদ-ই এমন গ্রন্থ যা হাজার বছর ধরে পৃথিবীর মানুষের আত্মায় প্রাণরস জুগিয়ে আসছে। এত বেশি লোক হররোজ ভক্তিরসে আপ্লুত হয়ে এ গ্রন্থ পড়ছে, এর তত্ত্ব-তথ্যে জ্ঞান পিপাসা নিবারণ করছে এবং এর আলোয় জীবন বদলাচ্ছে জীবন গড়ছে- যার কোন হিসেব নেই এবং যার তুলনায় পৃথিবীতে অন্য কোন গ্রন্থ ও পাওয়া যাবেনা।
পৃথিবীর অতীত ভবিষ্যৎ ও বর্তমানের সকল সাহিত্যের দর্প চূর্ণ করে দিয়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে নাযিল হওয়া এই কোরআন অসংখ্য মানুষের জীবন আলোকিত করেছে!
পৃথিবীর সব জ্ঞান বিজ্ঞান ইতিহাস ও দর্শনের গৌরব ম্লান করে দিয়ে কোরআন এমন এক শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করেছে–যেখানে এসে পৃথিবীর যাবতীয় অনাচার কুসংস্কার ও ভ্রষ্টতা মুখ থুবড়ে পড়েছে!
তাই নাজিলের সূচনাকাল থেকে অসংখ্য মানুষ এই গ্রন্থ নিবিষ্টচিত্তে পাঠ করেছে,নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করেছে এর প্রতিটি ছত্রের সঙ্গে।
এত অসংখ্য মানুষের নিবিড় সম্পর্ক যে গ্রন্থের সাথে তা আসলে কী? তার স্পিরিচুয়াল মেথডটাই বা কী?
এ কৌতুহল আজ অবধি মানুষের রয়ে গেছে। এ কৌতুহল মেটানোর নানাবিধ উপায়ও মানুষ অবলম্বন করেছে। প্রত্যেকে নিজ নিজ জ্ঞান ও উপলব্ধি অনুযায়ী তার পরিচয় দিয়েছে ও বিভিন্ন গুণ-বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু কোরআন মাজিদের সর্বাপেক্ষা সুন্দর পূর্ণাঙ্গ ও তৃপ্তিদায়ক পরিচয় কোরআন নিজেই দিয়েছে।
যে কেউ গভীর মনোযোগে কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করলেই ধাপে ধাপে তা পেয়ে যাবে। কোরআন তার শুরুতে মাঝে বা শেষে বিশেষ কোন এক জায়গায় তার সবটা পরিচয় একত্রে। খোলাসা করেনি বরং নিজেকে মেলে ধরেছে একটু একটু করে।
মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ গ্রন্থ হবার তাগিদে যেখানে যেই পরিচয় দেয়ার দরকার হয়েছে তাই দিয়েছে। এজন্যই কোরআনের তিলাওয়াতকারী এক ছত্র থেকে আরেক ছত্রে এগিয়ে যায় আর নতুন নতুন জ্ঞান ও বোধে সমৃদ্ধ হতে থাকে। পৃষ্ঠা থেকে পৃষ্ঠায় নবতর রূপের সন্ধান পায়।
এর মাঝেই কোরআন নিজের পরিচয় দিয়ে যায়। কোথাও কোথাও তার মুগ্ধ পাঠককে যেন বলে উঠে—তুমি এখনো চিনতে পারোনি আমাকে?
আমি তো এই! আমি তোমার জিজ্ঞাসার জবাব। তোমার কৌতুহল নিবারক। তোমার ব্যথিত হৃদয়ের সান্ত্বনা। আমি তোমার নিরুদ্যম মনের উদ্দীপনা। আমি তোমার অন্ধকার পথের আলোকধারা। তোমার অচেনা গন্তব্যের নিশ্চিত দিশা। আমি আরো অনেক কিছু!
তুমি আমাকে পড়ো। পড়তে থাকো। যত পড়বে তত জানবে। আমি এক অন্তহীন পরিচিতির আঁধার!
তবে, খুঁজে দেখলে কোথাও কোথাও কোরআন মাজিদের মৌলিক পরিচয় পাওয়া যায়।
কোরআন মাজিদ সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে নিজের যে পরিচয় দিয়েছে তা হচ্ছে–এটি একটি হিদায়াত গ্রন্থ। কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় এ পরিচয় হৃদয়শীতল হয়ে ব্যক্ত হয়েছে।
যেমন- ‘সূরা ফাতিহার’ পঞ্চম আয়াতে দর ভেতরে সেদিকে ইঙ্গিতের পর ‘সুরা বাকারার’ একেবারে সূচনাতে আল্লাহ বলেছেন- এটাই (সেই) কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই; এবং তা মুমিনদের জন্য হিদায়াত,পথনির্দেশক।
সুতরাং, কেউ চাইলেই কোরআনকে নানান বিচিত্র বিষয়ের গ্রন্থ বলে পরিচয় দিতে পারবেনা।তার পরিচয় আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। বলেছেন-কোরআন হচ্ছে ‘মানুষের জীবন জিজ্ঞাসার জবাব’। এটাই কোরআনের সর্বোত্তম পরিচয়।
কোরআনের পরিচয় দিতে গিয়ে অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন- (কোরআন হলো)-সংশয়, সন্দেহ ও দোদুল্যমানতার নিরসন। (সুরা ইউনুস-৫৬)
আরো বলেছেন, কোরআন হলো-নিরাময় ও রহমত,কৃপা ও করুণা, সতর্কতা ও স্মরণিকা,পথনির্দেশ ও আলোকবর্তিকা,শিফা,যিকর,হুদা। দলীল-প্রমাণ, নিদর্শন, উপদেশ ও প্রজ্ঞা।বাসায়ের, বুরহান,মাউইযা, হুজ্জত,ইলম ও হিকমাহ।
এইযে কোরআন নিজেই বলছে-আমি হিদায়াহ,আমি পথনির্দেশক।আসলে হিদায়ার সেই পথটি কী বা কেমন?
এর ব্যাখ্যা ও কোরআন দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- ‘বস্তুত এই কোরআন সেই পথ দেখায়,তা সর্বাপেক্ষা সরল’ (বনী ইসরাইল। আয়াত:০৯)
কোরআন যে পথ দেখায় এ আয়াতে তাকে ‘আকওয়াম’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এমন পথ-যা সকল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে অনুসরণযোগ্য,যা সকল পথ অপেক্ষা সহজ ও সরল এবং তা সর্বাপেক্ষা ন্যায়ানুগ। (তাফসীরে মাযহারি)
তাফসীরে কুরতুবীতে উল্লিখিত ‘আকওয়াম’র ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে-এমন পথ যা গন্তব্যে পৌঁছাতে সবচেয়ে নিকটবর্তী,সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত।
সুতরাং, কোরআনের হিদায়াত গ্রহণের অর্থ নিজেকে এমন পথে পরিচালিত করা-যা সবধরনের বাড়াবাড়ি ও প্রান্তিকতা থেকে মুক্ত। সম্পূর্ণ ঋজু ও ভারসম্যপূর্ণ।
প্রিয় পাঠক! কোরআনের জায়গায় জায়গায় কোরআন এভাবেই নিজেকে প্রকাশ করেছে। এই কোরআন এমনই এক যাদুকরি কালাম,যখন থেকে নাযিল হয়েছে তখন থেকেই মানুষের নৈমিত্তিক বিষয়াদি নিয়ে কথা বলেছে , প্রশ্ন এলে জবাব দিয়েছে, নতুন সমস্যার সমাধান দিয়েছে; জীবন, জগত, ঘটনার ঘনঘটা সবই খুলে খুলে বলেছে।
একদিকে তাতে যেমন অতীত ইতিহাস বিবৃত হয়েছে,তেমনি অপর দিকে বিধৃত হয়েছে ভবিষ্যদ্বাণী।
আয়াত ও সুরা লিখিত কাগজ বা ফলক আকারে নয়, অবতীর্ণ হয়েছে উচ্চারণ ও পাঠরূপে। অঙ্কিত হয়েছে মানবীয় স্মৃতিপটে।
বিস্ময়কর এই কিতাব পৃথিবীর একমাত্র গ্রন্থ যা মানুষ মুখস্থ করতে পারে,রাখতে পারে এবং আজীবন পুনরাবৃত্তি করতে পারে। তাই আসুন, হৃদয়ের সবটুকু উজাড় করে এই কোরআনের পাঠে নিমগ্ন হই। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা নিজের কণ্ঠের উত্তম ব্যবহারে কোরআনকে সুন্দররূপে পাঠ কর।
কোরআনকে জানতে হলে কুরআনের মর্ম,বোধ, বিধান ও আবেদন বুঝতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই কোরআন পড়তে হবে।
তাই আমাদেরকে ও এসব গুণ-বৈশিষ্ট্য নিয়েই কোরআন পাঠে ব্রতী হতে পাবে। তাহলেই কোরআন পাঠের প্রকৃত স্বাদ ও কোরআনের মর্ম,বোধ এবং স্পিরিচুয়াল মেথডটা আমরা বুঝতে পারবো।
এসএস